Amazon Online Store

Blog Archive

Total Pageviews

Thursday, March 2, 2017

কুমারী জীবনের ধর্মীয় শিক্ষা


কুমারী জীবনে করণীয় সম্পর্কে জানাটা খুবই জরুরি।

কুমারী জীবন হচ্ছে মেয়েদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় মেয়েরা শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করে গার্হস্থ্য জীবনের জন্য তৈরী হয়। কুমারী জীবনে করণীয় কি সেটা নিয়ে তেমন কোন বই পাওয়া যায় না। মায়েরা দিদিমারা যা শিখান তাই শুধু কুনারীরা জানে। এখন মায়েরা ও দিদিমারাও তেমন কিছু জানে না তাহলে উনারা সঠিক শিক্ষা কোথেকে দেবেন। তাই কুমারী মেয়েদের শিক্ষা অতীব জরুরি। এই সময়েই মেয়েরা  খুব বেশি কাচা থাকে, মন কোমল থাকে ,অভিজ্ঞতা কম থাকে , খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয় এবং বিভিন্নভাবে বিপথগামীও হয়। সুতরাং অভিভাবককে তাদের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।



কুমারী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ঃ

১) শিক্ষাগ্রহণ: কুমারী মেয়েদের প্রথমে ভালভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। কারন শিক্ষিত মা ছাড়া শিক্ষিত জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে হবে।

২) সুস্বাস্থ্য গঠন: কুমারী মেয়েদের স্বাস্থ্য বিষয়ে খুব বেশি সচেতন হতে হবে। প্রথমত, নিজে সুস্থ থাকার জন্য আবার ভবিষ্যতে তার গর্ভে সন্তান আসবে। সন্তানের সুস্থতার জন্য তার সুস্থতা অতীব জরুরি। অধিক ঠান্ডা বা অঢিক গরম না খাওয়া। বেশি ঝাল বা নুন না খাওয়া। তেল কম খাওয়া বা পরিমানমত খাওয়া। বাইরের খাবার বা ফুটপাতের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া। পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।
৩) কুমারী মেয়েদের কাপড় চোপড় পড়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারন বাইরে অনেক বখাটে ছেলে থাকে। তার অসংযত কাপড় যেন বখাটেদের ইভটিজিং-র কারন না হয়। তাই পোশাক কেনার সময় বড়দের মতামত দেখতে হবে এবং মার্জিত রুচির বিষয়টা দেখতে হবে।
৪) চুলের ষ্টাইলও মার্জিতভাবে করা উচিত। এমনভাবে চুল বাঁধা উচিত নয় যা দৃষ্টিকটু লাগে।
৫) অযথা নখ লম্বা রাখার দরকার নেই। তা স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। নখে সুন্দর করে নেইল পালিশ দেওয়া যায়।
৬) রোদ থেকে বাঁচতে চোখে চশমা ব্যবহার করা যায় এবং বাইরের ধুলাবালি থেকেও চোখকে রক্ষা করা যায়।
৭) বাইরে বয়ফ্রেন্ড বা অন্য ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি করা উচিত নয়। আড্ডার নামে বা ডেটিং-র নামে কারো সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া উচিত নয়। বাবা বা্ ভাই ছাড়া কোন  পার্টিতে একা একা যাওয়া ঠিক নয়। বর্তমানে মেয়েদের বিভিন্ন ছেলেদের সাতে পার্কে ঘুরতে দেখা যায়।
৮)কুমারী বয়স থেকে ধর্মীয় অনুশীলনাদি শেখা দরকার। আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ব্রত পালন, ধর্মের ইতিহাস, বিভিন্ন ধর্মীয় মুনি, ঋষি, মহাপুরুষ, অবতার, ভগবান, সতীর ইতিহাস, দেবীর ইতিহাস জানা দরকার। এগুলো ভবিষ্যতে তার অনেক কাজে দিবে।
৯) সংসার ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। মা,কাকী,পিসি,মাসী,মামী, ঠাকুরমা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখে দেখে মেয়েরা অনেক কিছু শিখে। কিন্তু এমন আছে যে , মায়েরা অনেক কিছুই জানেন না। তার ফলে তারাও বিভিন্ন বিষয়ে অজ্ঞ থেকে যায়। সুতরাং তাদের স্বামী সেবা, শ্বশুর-শাশুড়ী সেবা, দেবর-ননদ ও সংসারের অন্যান্য দায়িত্ব সম্পর্কে শেখাতে হবে। স্বামীর পরিবারের সাথে কিভাবে সমন্বয় করবে তা শেখাতে হবে। রান্না বান্না থেকে শুরু করে সব বিষয় তাদের ধারণা দেয়া উচিত।
১০) কঠিন পরিস্থিতিতে মেয়েদের কিভাবে মেয়েদের সামলাতে হয় তা শিখাতে হবে।
১১) মেয়েদের অন্যতম একটা অস্ত্র হচ্ছে তাদের  ব্যবহার। তাই মেয়েদের ভাষা যাতে সুন্দর হয়, সুমধুর হয়, যুক্তিসংযত হয় তা বুঝতে হবে। কালী মাযের মূর্তি দেখুন। মায়ের জিহ্বা দাঁত দিয়ে ধরে আছেন অর্থাৎ তার মানে জিহ্বা বা ভাষা সংযত করতে হবে।
১২) কুমারী মেয়েদের সদাচার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শরীর থেকে কোন দুর্গন্ধ যেন বের না হয়, কোন রোগব্যাধি যাতে আক্রমণ না করতে পারে তা দেখতে হবে। চুল যাতে এলোমেলো না থাকে, পোশাক-পরিচ্ছদ যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
১৩)  দাম্পত্য জীবনের বিষয়গুলো কোন ঠাকুরমাকে দিয়ে জ্ঞান দেওয়া যায়। তাতে সে সচেতন হতে পারে। মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। মেয়ে যাতে সব কথা মাযের সাথে বলতে পারে বা জানাতে পারে।
১৪) রান্নাবান্না মেয়েদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের বিভিন্ন ধরণের রান্না শিখাতে হবে। কোনসময় কি রান্না করে তা শিখাতে হবে। কোন তরকারীর কি কি গুন , শরীরের জন্য কি উপকার, কোন তরকারী কোন অসুখে কাজে লাগে তা বুঝিয়ে দিতে হবে।
১৫) সন্তানচর্যার জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়। গর্ভাবস্থা থেকে বড় করা পর্যন্ত মেয়েদের কি কি করতে হবে, কিভাবে বাচ্চা মানুষ করতে হবে তা শিখাতে হবে।
১৬) মেয়েদের বিভিন্ন সিরিয়ালের প্রতি যে নেশা তা কাটাতে হবে। এতে করে তাদের জীবনের অনেক সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে বা অনেক পারিবারিক সমস্যা হতে পারে।
১৭) মেয়েদের সাথে প্রকৃতির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। তাই মেয়েরা ঘুরতে ভালবাসে।  মাঝে মাঝে বাবা-মা মেয়েকে ঘুরাতে নিয়ে যেতে পারেন।
১৮) সঞ্চয়ের বিষয়ে মেয়েদের ধারণা দিতে হবে। কিভাবে সঞ্চয় করা যায়।
১৯) সংসারে কিভাবে লক্ষী বউ হওয়া যায় তা শেখাতে হবে।
২০) বাইরের বিভিন্ন খারাপ বিষয়গুলো এবং বিপদগুলো সম্পর্কে তাকে ধারণা দিতে হবে যাতে সে সচেতন থাকতে পারে।
২১) মেয়ে একটু বড় হলে মা মেয়েকে বর নির্বাচন, বিয়ে এবং এসংক্রান্ত রীতিনীতি শিখাতে হবে।
২২) ধর্মান্তরের বিষয়ে মেয়েকে সতর্ক করতে হবে। স্বধর্মের কোন ছেলেক বিয়ে করাই শ্রেয় তা বুঝাতে হবে এবং ধর্মান্তরের কুফলগুলো কি কি সেসব বিষয়ে মেয়েকে সচেতন করতে হবে।
২৩) মেয়েদের সেলাই, বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ  শিখাতে হবে। এসব জানা থাকলে সে ঘরে বসে কাজ করেও ইনকাম করতে পারবে। স্বামীর দুসময়ে পাশে দাঁড়াতে পারবে। স্বামীর মৃত্যু হলেও অসহায় হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। উপার্জনের একটা ব্যবস্থা করতে পারবে।
২৪) বর্তমানে অনেক মেয়ে মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে । তা যে কত মারাত্মক ক্ষতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেসব বিষয়ে মেয়েদের সচেতন করতে হবে।
২৫) মেয়েদের মোবাইলে কথা বলা, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব করা , চ্যাটিং করা, ডেটিং করা এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। মেয়ে পড়ালেখার নাম করে কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, পড়াশুনায় কতটুকু মনোযোগী আছে, পড়তে বসে কি করছে, তার পরীক্ষার রেজাল্ট কেমন হচ্ছে সব তদারকী করতে হবে। তাকে এসব বিষয়ে সতর্ক করতে হবে।
২৬) মেয়েদের আযথা বকা-ঝকা করা যাবে না। কারন এসময় তারা খুব আবেগী থাকে। তাদের মধ্যে খুব বেশী মানসিক চঞ্চলতা দেখা যায়। সুতরাং এসব বিষয়ে সচেতন হয়ে ধীরে সুস্থে মনমানসিকতা দেখে, আদর দিয়ে প্রয়োজন হলে কঠোর শাসন করে বুঝাতে হবে। তাই প্রথম দিকে একটু শাসন করতে হয় পরবর্তীতে যাতে বিগড়ে না যায়। শাসনটা অবশ্যই স্বাভাবিক হতে হবে। মা-বাবা তাকে এত ভালোবাসা দিতে হবে যেন মেয়ে যেন মা-বাবার কথা শুনে ,শ্রদ্ধা করে,আদেশ মান্য করে।
২৭) নারীর শুদ্ধতার উপর যে জাতির শুদ্ধতা নির্ভর করে তা বুঝাতে হবে। তাই নারীদের পবিত্রতা খুব বেশী জরুরি।
২৮) অনেকসময় দেখা যায় মেয়েদের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এটা কিনে দিতে হবে ,ওটা কিনে দিতে হবে। এসব বিষয়ে ছোটবেলা থেকে সাবধান থাকতে হবে। তাকে শেখাতে হবে জীবনের মূল্যবোধ ও অপচয় সম্পর্কে।
২৯) মেয়েদের একটা বড় সমস্যা হল নিদ্রা ব্যাধি। এই বিষয়টাও খেয়াল করে শিখাতে হবে যেন সে অতিরিক্ত না ঘুমায়।
৩০) মেয়েদের ভালো ধর্মীয় শিক্ষামূলক সিনেমাগুলো দেখাতে পারেন । তাতে তার ধর্ম সম্পকে একটা বিশ্বাস ও আস্থা জন্মাবে।
৩১) মেয়ে যাই পড়ুক-ডাক্তারী,ইন্জিনিয়ারিং তাকে এসবের সাথে সংসারও সামলাতে শিখাতে হবে। কারন উচ্চশিক্ষিত পরিবারে এসব নিয়ে সমস্যা খুব বেশি হয়। যার ডিভোর্সের মত অপ্রীতিকর ও অনাকাক্ষিত ঘটনাও ঘটে। এটা আমাদের জন্য খুব লজ্জাকর বিষয়।
৩২) মেয়েদের চাকরি করতে হলে বাইরে খুব সচেতনভাবে চলতে হবে। কারন সমাজে খারাপ লোকের অভাব নেই । তারা সবসময় ওৎ পেতে থাকে কোন সুযোগে মেয়েদের ক্ষতি করবে। এমন নারীমুখো পুরষদের অভাব নেই সমাজে। তারা হিংস্র জানোয়ারের চেয়েও খারাপ। তাই চাকরী করার যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৩৩) অনেক মেয়ে পড়াশুনার জন্য হোস্টেলে থাকে তখন বাবা-মায়ের আওতার বাইরে থাকে। তখন তারা খারাপ সংসর্গে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পরিবেশের চাপে পড়ে সে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। এভাবে তারা নিজেদের খেই হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে মেয়েদের সবচেয়ে বেশী সচেতন থাকতে হবে বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ভালো বান্ধবী নির্বাচন করতে হবে। যাতে তাকে খারাপ সংগে পড়তে না হয়।
৩৪) অনেকে মেয়ে অবিবাহিত অবস্থায় বাইরে স্কলারশীপ নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে পড়তে যায়। সেক্ষেত্রেও তাদের নারী জীবন নিযে সচেতন থাকতে হবে। বিয়ে করে যেতে পারলে ভালো।
৩৫) অনেক মেয়ে সরকারী বা বেসরকারী বড় পদে চাকরী করে নিজের বিষয়ে অনেক অহংবোধ চলে আসে। কারও কথা শুনতে চায় না। বাবা-মার কথা পাত্তা দেয় না। যা ইচ্ছে তা করে। তাতে তাদের জীবন অসংগতিপূর্ণ হয়ে যায়। একসময় গিয়ে যখন সে বুঝতে পারে তখন আর করার কিছুই থাকে না।
৩৬) রূপ ও যৌবনের অহংকার দীর্ঘদিন থাকে না্। কিন্তু জীবনের তাৎপর্য্য আরও অনেক বেশী। জীবনটা অনেক দীর্ঘ। প্রথম জীবনে মেয়েরা তা বুঝতে চায় না। যখন বুঝে তখন তারা অবসন্ন হয়ে পড়ে নিজের কৃতকর্ম্মের জন্য। 
৩৭) কুমারী বয়সে মেয়েরা অনেক আবেগী থাকে বিধায় তাদেরকে বেশী শাসন করা যাবে না, শারীরিক প্রহার করা যাবে না। কারন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশী থাকে। তাই প্রথমেই তাদের এই বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। আত্মহত্যা যে মহাপাপ তা তাকে শিখিয়ে দিতে হবে। আত্মহত্যার বাইরেও জীবনে অনেক বিকল্প থাকে তা মেয়েদের শিখাতে হবে। তাতে তারা  কারণে-অকারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে না।

যুগপুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কুমারী জীবন নিযে বিভিন্ন বাণীগুলো দেওয়া হলঃ












রচয়িতা
কিশোরী মোহন দে