Amazon Online Store

Blog Archive

Total Pageviews

Tuesday, November 23, 2010

চলন হারা চরণ পূজা, বন্ধ্যা পূজা তাই জানিস।




HTML Image as link


The following image works as a link:


Qries


আমরা কি বন্ধ্যা পূজা করছি?

সনাতন ধর্মের বড় এটা অংশ হলো বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-পার্বণ ও বিভিন্ন ব্রত এবং যজ্ঞ। এই পূজা পার্বনগুলো ঘিরে বিভিন্ন উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,পালাকীর্ত্তন, লীলাকীর্ত্তন, নাম সংকীর্ত্তন, ধর্মসভা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, বস্ত্র বিতরণসহ আরও নানা অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে।সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আর্যদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজার প্রচলন ছিল মানুষের বিশ্বাস ও সামাজিক জীবনের বন্ধন সুদৃঢ় করার মানসে। ঈশ্বরের আরাধনার যে বিভিন্ন পদ্ধতি ঋষিরা দিয়ে গেছেন তার বাস্তব প্রতিফলন এটা। বিভিন্ন সময়ের আবহে এই পূজা-পার্বণের প্রেক্ষাপট, ক্ষে্ত্র, ধরণ, অনুশীলন,পরিধির পরিবর্তন হয়েছে। বেদে দেব-দেবীর স্তুতিমূলক এবং গাঠনিক বর্ণনামূলক শ্লোক রয়েছে। এছাড়া পরে বিভিন্ন লৌকিক দেবতা পূজার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বিভিন্ন কারনে। পর্যায়ক্রমিক এই ধারায় দেব-দেবীর পূজার সংখ্যা ও আচার-অনুষ্ঠানাদির ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। আবার ডিজিটালাইজেশানের যুগে বর্তমানে অঞ্চল থেকে অঞ্চলে বিভিন্ন মিডিয়াকে ভর করে পূজা-পদ্ধতি ও বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো খুব প্রসার লাভ করেছে। এই পরিবর্তন এত দ্রুত হয়েছে যে, আদৌ এগুলোর প্রয়োজন আছে কিনা কিংবা পূজার সাথে এগুলো সংগতিপূর্ণ কিনা ভেবে দেখার সময় হয় নি। তবে, এখন এটা ভাবা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন পূজা-পার্বণের সাথে অর্থনীতি ও রাজনীতির একটা বিশাল যোগসাজশ আছে। অনেকের জীবন-জীবিকা এই পূজার উপর অনেকটা নির্ভরশীল। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতার চাইতেও এর সাথে জড়িত অর্থনৈতিক কার্যক্রম  বেশ বড় ভূমিকা রাখছে এর প্রসারে। নৈবদ্য, কাপড়, পূজার উপকরণাদির ব্যবসা জমজমাট হচ্ছে দিন দিন।
তবে পূজার আদর্শগত ভিত্তি,আধ্যাত্মিক ভিত্তি ও বাস্তবিক ভিত্তি কি তা মূল্যায়ন করার ও পরিমাপ করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। এই বৃহৎ যজ্ঞের মূল শিক্ষাই কি বা ক্ষতিই বা কি তা জানার সদিচ্ছা বেশিরভাগ সনাতনীরই নেই। কোন পূজার কি মাহাত্ম্য তা জিজ্ঞেস করলে এর সদুত্তর অনেকের থেকেই পাওয়া যাবে না। তাই এই পূজাকে ঘিরে এত যে বাহুল্যতা ও অযৌক্তিক উন্মাদনা তার গতিকে রোধ করার ক্ষমতা করো হাতে আছে কিনা জানা নেই।  

যুগপুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, আমরা যদি চলনছাড়া চরনপূজা করি তবে তা বন্ধ্যা পূজার শামিল হবে। অর্থ্যাৎ এই পূজার কোন ফল বাস্তব ফল নেই।
পূজা মানে হচ্ছে দেবতার গুনকে নিজের মধ্যে আচরনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। আমরা যে দেবতার পূজা করছি যেন সেই দেবতার মত নিজের জীবনকে সাজাতে পারি, গড়ে তুলতে পারি। আমাদের মাঝে  দেবভাব গজিয়ে উঠবে। আমাদের আচরনে পরিবর্তন আসে। আমাদের ভাষা-ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। এটাই দেবদেবী পূজার মূল মাহাত্ম্য। বাস্তব মূর্তি পূজা।
দেবতা মানে যিনি দীপ্তি পাচ্ছেন । যিনি আলোকিত, দীপ্তিমান তিনি দেবতা।
কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র হলো উল্টো। আমরা পূজা মানে বুঝি নৈবদ্য দেওয়া, প্রসাদ খাওয়া, ডিজে গান বাজানো, ডান্স করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা, মেয়েদের নিয়ে তামাশা করা, ডেটিং করা,ভালো ভালো শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ানো, দামী দামী প্যান্ডেল আর লাইটিং করা, মদ খেয়ে মাতলামী করা, এই প্যান্ডেল ওই প্যান্ডেল ঘুরে বেড়ানো আর যার কাছ থেকে যত বেশী পারা যায় চাঁদা আদায় করা -এসব। এসব কান্ড কারখানার ঠেলায় পূজার আসল মাহাত্ম্য বুঝার সময় কোথায়। কারন এত সময় কার আছে যে এসব ক্লাসিক তত্ত্ব বুঝতে যাবে। হিপ হপের যুগে ওসব ক্লাসিক চলে না। ধর্মীয় গানের বালাই নেই শুধু বাজবে হট গান। এসব হট গানের ঠেলায় আশে পাশের জীবন্ত মানুষের জীবন অতিষ্ট। কোন ক্লাব কত সুন্দর ডিজাইন করল,কে কত টাকা খরচ করতে পারল, কে কত টাকা লাইটিং করতে পারলো তার প্রতিযোগিতাই চলতে থাকে। অনেকের আবার এসব পূজো থেকে ভালো আয় হয়। সারা বছরের চলার টাকা এখান থেকে রোজগার হয়। ব্রাহ্মণও ভালো প্রণামী পান তাই তিনি এসব বিষয় বলে কেন প্রণামী থেকে বঞ্চিত হবেন। তিনি সব বুঝে শুনে চুপ করে থাকেন। তিনি উল্টাপাল্টা বললে তো উনার চাকরিটাই থাকবে না। এসব এখন প্রচলিত সত্য। আসল সত্য এখন অন্দরে-কন্দরে লুকিয়ে থেকে মুখ ঢেকে কান্না করে। কবে সনাতনীদের বিবেক জাগ্রত হবে? কবে তারা বুঝবে আসল ধর্ম কি?
তাই শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই কথাটা আমাদেরকে সচেতন করে দিযেছেন। আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে গেছেন। চলন হারা চরণ পূজা, বন্ধ্যা পূজা তাই জানিস।

অনেকে পূজোয় চাঁদা দেওয়াটাকে বড় ধর্ম মনে করেন। কারন আমি টাকা দিয়েছি, ব্রাহ্মণ পূজো করেছে, দু-পাঁচ হাজার লোক ভোজন করেছে ধর্ম তো হয়ে গেল। এত উপাসনা, ধ্যান, শাস্ত্র অধ্যয়ন, সদাচার পালনের  কি দরকার? দু একটা সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলে লাইকের পর লাইক একেবারে ভাইরাল। আর সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারলে তো কথাই নেই। আমি তো নিজেকে বড় মানবতাবাদী ও বড় ধার্মিকরূপে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হলাম। পরবর্তীতে বড়  একটা সংগঠনের কোন একটা পোস্ট কিনে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। আমার আর কি লাগে।

আমরা এত  পূজা করি অথচ আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের গতি নেই কেন? আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি কেন? আমরা কি তাহলে সঠিক পথে নেই?
               
শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাই বলেছেন,

পূজা-পাঠ তুই যতই করিস
       ফুল তুলসি গঙ্গা জলে,
অনুশীলনী-কৌশল ছাড়া
ফল হবে না কোন কালে। 
আমরা খালি ফুল ,তুলসী আর গঙ্গা জলে পূজো দিতে অভ্যস্থ অথচ কোন ধরনের অনুশীলনে আমরা আগ্রহী না। ধর্ম চর্চা যত না করা যায় ততই আমরা খুশি । আমরা শুধু আড্ডা আর মদ খেয়ে যাবো আর বৌকে টাকা দিব সে মন্দিরে গিয়ে পূজো দিয়ে আসবে অথবা ব্রাহ্মণ বাড়িতে এসে পূজা দিয়ে গেল আমাদের ধর্ম তো হয়ে গেল। আমাদের আর মন্দিরে যাবার দরকার কি? ব্রাহ্মণ তো উনার মত করে টাকার বিনিময়ে আমাদের জন্য দেবতাকে ডেকে দিয়েছেন। কত সুন্দর আমাদের ধর্ম চর্চা ! এইভাবে আমরা বংশ পরম্পরা দেখে আসছি। তাতেই আমরা অভ্যস্থ। আমার বাবা করেনি, বাবার বাবা করে নি,বাবার বাবার বাবা করে নি আমিও করছি না আর আমার ছেলেও করবে না। এইভাবেই আমাদের সনাতন ধর্ম এগিয়ে যাবে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে যতটুকু যাওয়া যায়। টাকা দিয়ে যদি ধর্ম হতো তাহলে আমাদের আগেকার জমিদারদের অহংকারের আস্ফালনে করা পূজার অনর্থ হিসেবে আজকে পথের ফকির হতে হতো না অথবা বংশ নির্বংশ হতে হতো না।

রাজসিকভাবে দেবদেবীর পূজায় আমাদের ক্ষতিঃ
১) আমাদের মাঝে বিকৃত রুচি তৈরী হচ্ছে। যা পরবর্তীতে আমাদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতেছে।
২) কুসংস্কার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩) হিন্দুরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। লাখ লাখ টাকার প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছে । লাখ লাখ টাকা প্যান্ডলে ও লাইটিংয়ে ব্যয় হচ্ছে।
৪) হিন্দু ছেলেপেলেরা বার মাসে তের পার্বনের আয়োজন করতে গিয়ে পূজার চাঁদা তুলতে গিয়ে তাদের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে খুব। তারা ভাবতেছে এটাতে অনেক ধর্ম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা মেধার অপচয় করতেছে আর অবনতির দিকে ঢলে পড়তেছে।
৫) ধর্মের প্রকৃত সত্য থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।
৬) ধর্মের অনুশীলন থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।
৭) নিজেদেরকে জ্ঞানের চর্চা থেকে দূরে সরিয়ে রাখছি।
৮) আমাদের কুমারী মেয়েদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি তারা পূজায় ঘুরতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থার স্বীকার হচ্ছে। আরও নানাভাবে বিপদগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের মধ্যে একধরনের মানসিক বিকৃতি ঢুকে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরী হচ্ছে।
৯) ছেলেগুলো বখাটে হওয়ার শিক্ষা পাচ্ছে।
১০) ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে ডান্সের কারনে বিকৃত মানসিকতা গড়ে উঠতেছে।
১১) পূজার নামে মদ খাওয়ার যে চর্চা হয় তাতে ঐ ছেলেগুলোর মাঝে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঝুকি বাড়ে বা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
১৩) ডিজে গানের ঠেলায় প্রকৃত ধর্ম চর্চা ব্যহত হচ্ছে এবং মানুয়ের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে।
১৪) ধর্মীয় বিশ্বাস ভঙ্গুর হচ্ছে দিন দিন। ধর্মান্তরের পথ প্রশ্বস্থ হচ্ছে।
১৫) ধর্মকে সাত্বিকভাবে না করে রাজসিক ও তামসিক করে ফেলছে। যাতে রাক্ষস আর ভূত প্রেতের পূজাই বেশি হচ্ছে।
১৬) এক জনের রোগব্যাধি বহুজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
১৭) পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবের নামে চাঁদাবাজ গ্রুপ তৈরী হচ্ছে।
১৮) প্রকৃত কর্মের সাধনাকে ভুলে বিকৃত সাধনায় জড়িত হচ্ছে।
১৯) বাস্তব আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা সংকুচিত হচ্ছে। বড়দের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা কমে যাচ্ছে।

পূজার ধরণ কত প্রকারঃ

শ্রীকৃষ্ণ গীতার জ্ঞান-বিজ্ঞান যোগের ২২ নম্বর শ্লোকে বলেছেন,
যে দেবদেবীর পূজা  করে সে দেবলোক প্রাপ্ত হয় আর আমাকে যে ভজনা করে সে আমাকে লাভ করে।
শ্রীকৃষ্ণ গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে জ্ঞানযোগের ১২ নম্বর শ্লোকে বলেছেন, যে ব্যক্তি দেবতার পূজা করিয়া সিদ্ধি লাভ করিতে চায় ,তবে সে দেবতাকে পায় কিন্তু মুক্তি লাভ করিতে পারেনা।

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কি ভগবান? জানতে ক্লিক করুন..... 


গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- শ্রীমদভগবদগীতা ৯.২৫
শ্লোক-
যান্তি দেবব্রতা দেবান পিতৃন যান্তি পিতৃব্রতাঃ ।
ভূতানি যান্তি ভূতেজ্যা যান্তি মদযাজিনোহপি মাম।।


অনুবাদ-
“দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবে, পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক
লাভ করে, ভূত-প্রেত আদির উপাসকেরা ভূতলোক লাভ করে এবং আমার উপাসকেরা আমাকেই লাভ করে”


অর্জুনের – শ্রদ্ধা কাকে বলে – এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে -শ্রদ্ধা তিন প্রকারের – সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক| শ্রদ্ধা জন্মান্তরকৃত ধর্মাদিসংস্কার হতে জাত| এই জন্যেই জীবের ত্রিবিধ স্বভাব হতে জাত শ্রদ্ধাও তিন প্রকার – সাত্ত্বিকী, রাজসিকী ও তামসিকী| সাত্বিক ব্যক্তিগণ দেবগণের পূজা করেন, রাজসিক ব্যক্তিগণ যক্ষ ও রাক্ষসগণের পূজা করেন এবং তামসিক ব্যক্তিগণ ভুতপ্রেতাদির পূজা করেন| এমনকি এই তিন প্রকার ব্যক্তিগণের আহারাদিও গুণভেদে তিন প্রকার| যে সকল আহার আয়ু, উদ্যম, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বৃদ্ধি করে, সরস, স্নিগ্ধ ও পুষ্টিকর এবং মনোরম সেইগুলিই সাত্ত্বিক ব্যক্তিগণের প্রিয় হয়| যা সকল আহার দুঃখ, শোক ও রোগ সৃষ্টি করে এবং অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ণ, অতি শুষ্ক এবং অতি প্রদাহকার সেইগুলিই রাজসিকগণের প্রিয় হয়| আর কাঁচা, দুর্গন্ধময়, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও যজ্ঞে নিষিদ্ধ সেইসব আহারই তামসিকগণের প্রিয় হয়|
এইরূপ যজ্ঞও তিন প্রকার| যজ্ঞ করাই কর্তব্য মনে করে ফলাকঙ্খাবিহীন ব্যক্তি শাস্ত্রবিহিত যে যজ্ঞ করেন তাহাই সাত্ত্বিক যজ্ঞ| কিন্তু স্বর্গাদি ফল কামনা করে দম্ভ প্রকাশের জন্য যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় তা রাজসিক যজ্ঞ| আর শাস্ত্রবিধিবর্জিত, অন্নদানশুন্য, মন্ত্রহীন, দক্ষিণাবিহীন, শ্রদ্ধারহিত যে যজ্ঞ তা তামসিক যজ্ঞ| অনুরূপভাবে তপস্যাও তিন প্রকারের – সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক| দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরুজন ও প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য, অহিংসা, অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় ও হিতবাক্য এবং বেদাদি শাস্ত্র পাঠ, মনের প্রসন্নতা, সৌম্যভাব, বাকসংযম, মনের নিরোধ, ব্যবহারে ছলনারহিত, ফলাকাঙ্খাবিহীন সমাহিত ব্যক্তিগণ শ্রদ্ধাভরে যে তপস্যা করেন তা হল সাত্ত্বিক তপস্যা| সম্মান ও পূজা পাবার আশায় যে তপস্যা করা হয়, যা ইহলোকে কদাচিৎ ফলপ্রদ হয় সেই তপস্যা হল রাজসিক তপস্যা| আর দুরাকঙ্খার বশবর্তী হয়ে দেহ ও ইন্দ্রিয়কে কষ্ট দিয়ে বা অপরের তপস্যা বিনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয় তা হল তামসিক তপস্যা| দান করা কর্তব্য এইভাবে প্রত্যুপকারের আশা না করে পুণ্যস্থানে, শুভ সময়ে ও উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয় তাকে সাত্ত্বিক দান বলে| যে দান প্রত্যুপকারের আশায় ও কোন পারলৌকিক ফল লাভের উদ্দেশ্যে এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও করা হয় তা রাজসিক দান| অশুচি স্থানে, অশুভ সময়ে ও অযোগ্য পাত্রে অবজ্ঞাপূর্বক ও প্রিয়বচনাদি সৎকার-রহিত যে দান করা হয় তা হল তামসিক দান|

 শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুসারে আমরা কি আদৌ দেবতার পূজা করছি নাকি রাক্ষসের পূজা করছি সেটা একটু ভেবে দেখবেন। রাজসিক মনমানসিকতা নিয়ে আসলে কি সাত্বিকভাবে দেবতার পূজো হয়?

হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতাঃ
  হিন্দুরা শুধুই জানে ৩৩ কোটি দেবতা আছে তাদের। কিন্তু কখনও তারা ৩৩ কোটি দেবতাগুলো কে কে এটা চেনার চেষ্টাও করেনি। ৩৩ কোটি দেবতার নাম কি কি?  সংস্কৃত কোটি শব্দের বাংলা অর্থ প্রকার। ৩৩ কোটি অর্থাৎ ৩৩ প্রকারের দেবতা হিন্দুদের। চলুন তাদের নামগুলো জেনে নিই। শতপথ ব্রাহ্মণে (১৪/৫)যাজ্ঞবল্ক্য ঋষি শাকল্য বলছেন : 

অষ্টবসু- ১.অগ্নি ২.পৃথিবী ৩.বায়ু ৪.অন্তরীক্ষ ৫. দ্যৌঃ ৬.আদিত্য ৭.চন্দ্র ৮.নক্ষত্র 

একাদশ রুদ্র : ৯.প্রাণ ১০.অপান ১১.ব্যান ১২.সমান ১৩.উদান ১৪.নাগ ১৫.কুর্ম ১৬.কৃকর ১৭.দেবদত্ত ১৮.ধনঞ্জয় ১৯.জীবাত্মা দ্বাদশ আদিত্য : ১২মাসকে এক সাথে দ্বাদশ আদিত্য বলা হয় তাহলে ১৯+১২=৩১জন ৩২.ইন্দ্র অর্থাৎ বিদ্যুৎ এবং ৩৩.প্রজাপতি বা শুভকর্ম ।

আমরা কত দেব -দেবীর পূজা করছি যেমন-কালী,শিব,দুর্গা, স্বরসতী, গনেশ, কার্তিক, মনসা, তারা, শীতলা, শনি, লক্ষী,বিপদনাশিনী, বিশ্বকর্মা , অশ্বিনীকুমার আরও ৩৩ কোটি দেবতা। অথচ দেখেন গনেশ পূজা করি আমাদের মধ্যে বুদ্ধি কম, লক্ষীর পূজা করছি কিন্তু ধনদৌলত নাই, কার্তিকের পূজা করি কিন্তু আমরা নিরীহ, স্বরসতীর পূজা করি কিন্তু আমাদের বিদ্যা অর্জনের জন্য অক্সফোর্ডে যেতে হয়, শনি পূজা করেও গ্রহদশা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশী জাকজমক হয় দুর্গা পূজা অথচ ধর্ষনে আমাদের স্থান দ্বিতীয়। তাহলে সেই পূজার মানে কি? এরকম আরও বহু বলা যায়। 

মা-বাবাই জীবন্ত গৃহদেবতা।
আমরা পূজার নাম করে কত কিছু করছি। বড় বড় মন্দির করছি। প্রসাদের ব্যবস্থা করছি। পূজাতে দেবতার নামে নিশংসভাবে পশুবলি দিচ্ছি। অথচ আমার ঘরের জীবন্ত মা-বাবা তাকে মানছি না। তাদের শ্রদ্ধা করছি না, সম্মান করছি না। তাদের খাবার দিচ্ছি না। চিকিৎসা করাচ্ছি না। তাদের সাথে ভালো আচরন করছি না। আমি বউ নিয়ে আলাদা থাকছি অথচ তাদের খোঁজ খবর রাখছি না। এটাই হল মূল ধর্ম। প্রকৃত দেব-দেবী হলো আমার বাবা মা। তাদের আগে সেবা করতে হবে। শিবের মাথায় জল না ঢেলে ,দুধ না ঢেলে বৃদ্ধ মা বাবাকে খাওয়ান। তাতে উনারা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলে আপনি এমনিতেই ভাল থাকবেন। মাসে মাসে ৩৬টা পূজো না দিয়ে ঘরে আগে খাবার যোগান। তাতে আপনার জীবনে এমনিতেই শান্তি আসবে। দেবতার মন্দিরে মাথা ঠুকলে পয়সা আসবে না। কর্ম করলে পয়সা আসবে।  সুতরাং ওটা হলো বড় ধর্ম। সৎচিন্তা, সৎকর্ম, সদাচার, জ্ঞান আহরন, মানবতা এসব বড় ধর্ম। আপনি ভালো থাকলে, ভালো চললে দেবতা এমনিতেই আশীর্বাদ করবেন। দীক্ষা ,প্রার্থনা, নামধ্যান, গ্রন্থ অধ্যয়ন, জপ, সদাচার, এসব হলো প্রাত্যহিক অনুশীলন। অনুশীলন ছাড়া আমরা সহজে কোন ফল পাবো না। আমাদের জীবনের প্রকৃত উন্নয়ন করতে চাইলে দানের পাশাপাশি অনুশীলন করতে হবে। ব্রাহ্মণকে দিয়ে করালে হবে না। লোক ভাড়া করে যদি আপনার বাবাকে বাবা ডাকান বাবা কি খুশি হবেন। কিন্তু আপনি ডাকলে উনি খুশি হবেন। নিজেই নিজের প্রার্থনা করতে হবে। পরিবারে ধর্মানুশীলন বাড়াতে হবে। তাতেই ধর্মের প্রকৃত জাগরন ঘটবে। আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে।

 শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কি ভগবান? জানতে ক্লিক করুন......

ব্রাহ্মণের বৈশিষ্ট্যঃ

আবার দেখুন , যে ব্রাহ্মণ দিয়ে আমরা পূজা করাই আসলে সে পূজা করার যোগ্য কিনা। তার মধ্যে সাত্বিক আচরন আছে কিনা। যে মাংসাশী, ধূমপায়ী, কুলসংস্কারহীন ও অসদাচারী সে আবার কি করে দেবতার পূজা করবে? সেই ব্রাহ্মণ দিয়ে পূজা করালে কি আদৌ মঙ্গল হবে আপনার? আদৌ কি সেই পূজা সফল হবে? আদৌ কি দেবতা সন্তুষ্ট হয়ে গ্রহণ করবেন? যেটা করে আপনি সন্তুষ্ট না তাতে দেবতাও সন্তুষ্ট নন। আপনার মনকে আপনি প্রশ্ন করে দেখুন। তাইতো অমঙ্গল আমাদের উপর ঘাড়ে চেপে বসেছে। তার চেয়ে দেবতার পূজা নিজে করাই শ্রেয়। ভক্তিভরে তাকে ফুল, তুলসী, চন্দন ও ধূপ দিয়ে পূজা করলে দেবতা খুশিমনে তা গ্রহণ করবেন। এর দ্বারা নিজের মধ্যেও ভক্তিভাব জাগ্রত হবে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে কীর্ত্তন দলি এনে ভগবানকে না ডেকে , নামসংকীর্ত্তন না করে নিজেরা করুন তাতেই মঙ্গল হবে আপনার। এতে সবার মঙ্গল হবে বেশি।

নৈবদ্য আর প্রসাদের ধর্মঃ

হিন্দু ধর্ম হয়ে গেছে নৈবদ্য আর প্রসাদের ধর্ম। বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে বছরে একবার বা দুবার পূজো দিয়ে আসলাম আমার বেশ ধর্ম হয়ে গেল। আমার আর কোন ধর্মানুশীলনের দরকার নেই। তাহলে ,দেখুন আপনি তো প্রতিদিন তিনবেলা খাচ্ছেন, তাও মাছ-মাংস আরও নানা তরকারী দিয়ে আর ভগবানকে দিচ্ছি চিনি,বাতাসা অথবা কিচমিচ। তাও আমার যখন সময় হবে তখন। কোনদিন ১ টায় আবার কোনদিন ৩ টায়।  আর মহোৎসবগুলোতে আমরা যাই প্রসাদ খেতে কীর্ত্তন আর ধর্মসভা শুনার সময় আমাদের হয় না। কোনমতে প্রসাদটা খেতে পারলে আমার স্বার্থ উদ্ধার হলো এবার যেতে পারলে বাঁচি। আমাদেরকে এসব ধারা থেকে বের হতে হবে। আমি ঠাকুরের কথা শুনতে যাব আমার প্রয়োজনে। খাবার প্রয়োজনে নয়। বাস্তবতা হলো প্রসাদ না দিলে তো আমরা সেখানে যাবই না।

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,

নিজ হাতে গুরুসেবা করলে অহংকার পাতলা হয়। 

প্রকৃত ধর্ম কিঃ
 
বাঁচা-বাড়ার মর্ম যা
ঠিকই জানিস ধর্ম তা।
বাঁচতে নরের যা যা লাগে
তা তা দিয়েই ধর্ম জাগে।
ধর্মে জীবন দীপ্ত রয়
ধর্ম জানিস একই হয়।

বেশিরভাগ দেবতার পূজা আমাদের প্রকৃত ধর্ম নয়। আমাদের প্রকৃত ধর্ম হলো বাঁচা এবং বাড়া। জীবনে আমরা কি করে বাঁচব আর বাড়ব তাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম। আর সেই বাঁচা আর বাড়াটা কিভাবে হয়  আমাদের সদগুরুর দীক্ষা নিতে হবে। যুগপুরুষোত্তমের দীক্ষা নিতে হবে। ভগবানের দীক্ষা নিতে হবে। দীক্ষা নিয়ে সেই যুগপুরুষোত্তমের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। কারন যুগপুরুষোত্তমের আদর্শে আছে বর্তমান যুগের প্রকৃত মুক্তির পথ। ভগবানের পূজা-অর্চনা করা আর তার আদর্শ অনুসরণ করাই আমাদের কর্তব্য। দেবতাদের পূজার দ্বারা আমাদের কোন জ্ঞান হয় না। দেখুন আপনি পূজা মন্ডপে যান তারপর প্রতিমা দেখে ঘুরে চলে আসেন। সেখানে কোন ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। সত্যিকার বাস্তব জ্ঞান  অর্জনের সুযোগ নেই। বাস্তবিক জীবনে চলার জন্য সঠিক নির্দশনা পাওয়া যায় যুগাবতারের কাছ থেকে। 
শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,
সবদেবতার সমাহারে
                        পুরুষোত্তমের সৃষ্টি,
সহজ মানুষ নররূপে 
                      করেন ধৃতি বৃষ্টি। 
যুগপুরুষোত্তম প্রতি যুগে যুগে ধরাধামে আসেন এবং আমাদের মুক্তির পথ বলে দিয়ে যান।  যুগপুরুষোত্তম ও ভগবানই আমাদের জীবনের প্রকৃত আদর্শ। আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আমরা দেব-দেবীর পূজা দিতে পারি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা যেন সময়মত দীক্ষা নিয়ে সঠিক পথ অনুসরন করি। জীবনের বাস্তব পথ ভুলে অবাস্তব পথকে অনুসরন না করি। জীবনকে সার্থকভাবে পরিচালিত করার জন্য আমাদের গুরু ধরা জরুরি। তিনি আমাদের শিখিয়ে দিবেন কোন পথে গেলে আমাদের প্রকৃত মঙ্গল হবে। আমাদের জীবনে সুখ ও শান্তি আসবে। তাই আমাদের প্রকৃত পথ খুঁজে নিয়ে সেই পথ অনুসরন করতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, তোমরা সব কিছু ছেড়ে শুধু আমারই আরাধনা কর, আমারই উপাসনা কর।
অথচ আমরা কৃষ্ণের কথা শুনিনি।আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরে পুরনো বিধান নিয়ে পড়ে আছি। নতুনকে গ্রহণ করতে আমরা দ্বিধাগ্রস্থ। সেই কথা না শুনার কারনে আমরা আজকে বিপদের মধ্যে আছি। আমরা যদি শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনতাম তাহলে আমাদের এত সমস্যা হত না। আজকে যখন আমাদের মূর্তি ভাঙা হয় আমরা কত দুঃখিত হই। কত মিটিং,মানববন্ধন,মিছিল করি। কিন্তু আমরা ভেবে দেখিনা আমরা সঠিক নাকি ভুল পথে আছি।
শ্রীশ্রী ঠাকুর আরও বলেছেন,
দেবতার পায়ে মাথা ঠুকে
                 ফাঁকিতে চাস বাগাতে মাল,
দেবতা কি তোর এতই পাগল
                ফাঁকি দেখেও নয় সামাল।
আমরা মন্দিরে গিয়ে দেবতার পায়ে মাথা ঠুকি যেন দেবতা আমাকে সব এমনি এমনি দিয়ে দেন। আমার সব পাপ যেন ক্ষমা করে দেন। আমাদের এরকম আচরন দেখলে দেবতাও হাসেন। কারন আমরা ফাঁকিবাজ। দেবতার পায়ে মাথা ঠুকে ক্ষমা চাই। বর ভিক্ষা চাই। দেবতাও তখন আমাদের ফাঁকি দেন। আমরা আমাদের কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারি না। 
শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,
দেবদেবতা হাজার ধরিস
              আচার্য্য যার ইষ্ট নয়,
স্পষ্টতর বুঝে রাখিস
              জীবন চলার নেহাত ভয়। 
আমরা যতই দেবদেবতা ধরি না কেন আমাদের একজন আচার্য্যকে আনুসরন করতে হবে। যিনি হচ্ছেন জীবন্ত আদর্শ। যিনি জীবনের বাস্তব তুকগুলি জানেন। আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন একজন গুরু আমাদেরকে অনুসরন করতে হবে। যিনি অনেক সমূহ বিপদ থেকে আমাদের বাঁচাতে পারেন। তিনি বলে দিতে পারবেন কোন পথে গেলে আমাদের মঙ্গল হবে। সৎসঙ্গে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হচ্ছেন ভগবান আর শ্রীশ্রী দাদা হচ্ছেন বর্তমান আচার্য্যদেব। যিনি তাঁর দৈবী নির্দেশনা দিয়ে সৎসঙ্গকে পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেছেন, 
পুরুষোত্তম আসেন যখন
                  সকল গুরুর সার্থকতা,
তাকে ধরলে আসে নাকো
                  গুরুত্যাগের ভিন্ন কথা। 

পুরুষোত্তম জন্মসিদ্ধ
                              মন্ত্র প্রতীক তিনি,
সাধক পুরুষ তাকেই বলে
                                  সাধনসিদ্ধ যিনি। 

সকল ধর্মের সেরা ধর্ম
                      পুরুষোত্তমের স্মরণ নেওয়া,
সকল পাপের মোচন তাতে 
                      তাতেই হবে সফল চাওয়া। 

ধর্ম যখনি বিপাকী বাহনে
                        ব্যর্থ অর্থে ধায়,
প্রেরিত তখনি আবিভূত হন
                                পাপী পরিত্রাণ পায়। 

পুরুষোত্তম আসেন যখন
                          কয়জন তারে ধরে,
কয় ভগবান পুরুষোত্তম
                         চলে যাবার পরে। 

শঙ্খ-চক্রী আজও নারায়ণ
ধর্ম-স্থাপনে জনম লন।

অসীম যখন সসীম হয়ে
                                    ধরাতে লন স্থান,
বৃত্তিভেদী টান হলে তোর
                                     দেখবি ভগবান। 

বলিপ্রথাঃ 
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি কুসংস্কার হলো বলিপ্রথা। হিন্দু দেব-দেবীর পূজায় পশুবলি দেওয়া হয়। তা বিধিমাফিক নয়। 

এই অমানবিক প্রথাগুলো বন্ধ করা হোক।

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,








 সবশেষে বলতে চাই আমাদের বন্ধ্যা পূজা করা উচিত নয়। আমাদের উচিত ধর্মের বাস্তবদিকটাকে অনুসরন করা। ধর্মপ্রচারক ও পূজারীদেরকেও এই বিষয়টার উপর জোর দিতে হবে। হিন্দুদেরকে আসল ধর্মপথ কি তা বুঝাতে হবে। সঠিক পথ না মানলে আমরা সুন্দরভাবে আগামীর পথে এগিয়ে যাবো কেমন করে?
রচয়িতা

Monday, November 22, 2010

MAKE MONEY ONLINE

TO MAKE MONEY ONLINE CONTACT-008801811688642

যুগধর্ম ও বেদ প্রসঙ্গে

যুগধর্ম ও বেদের সম্পর্ক ও তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। একটু ধৈর্য ধরে পড়ুন। অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

বেদ হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। ‘বেদ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। বেদ প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ তত্ত্বজ্ঞান-সংক্রান্ত একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদই সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ[১][২] সনাতনরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক)[৩] এবং "নৈর্বক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা নিরাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনও রচয়িতা নেই) যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। তাই এঁদের বলা হয় মন্ত্রদ্রষ্টা। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও ছিলেন, যেমন বিশ্ববারা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি।
বেদের এক নাম শ্রুতি। এর কারণ, লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘকাল বেদ ছিল মানুষের স্মৃতিতে বিধৃত। গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি অর্থাৎ শ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করা হতো। যেহেতু শোনা বা শ্রুতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটত তাই এ থেকে বেদের এক নাম হয় শ্রুতি।
বেদকে ত্রয়ীও বলা হয়। এর কারণ, বেদের  মন্ত্রগুলি আগে ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহারের সুবিধার্থে মন্ত্রগুলিকে ঋক্, যজুঃ, সাম এই তিন খন্ডে বিন্যস্ত করেন। তাই বেদের অপর নাম হয় সংহিতা। বেদ চারখানা হলেও চতুর্থ অথর্ববেদ  অনেক পরবর্তীকালের রচনা এবং এর কিছু কিছু মন্ত্র প্রথম তিনটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যজ্ঞে এর ব্যবহার নেই। অবশ্য বেদকে ত্রয়ী বলার অন্য একটি কারণও আছে এবং তা হলো: এর মন্ত্রগুলি মিতত্ব, অমিতত্ব ও স্বরত্ব এই তিনটি স্বরলক্ষণ দ্বারা বিশেষায়িত, যার ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রগুলিকে উপর্যুক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বেদের রচনাকাল সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। এ নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পন্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্যও দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, বেদ  রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়।
বেদের চারটি অংশ মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও  উপনিষদ্। মন্ত্রাংশ প্রধানত পদ্যে রচিত, কেবল যজুঃসংহিতার কিছু অংশ গদ্যে রচিত। এটাই বেদের প্রধান অংশ। এতে আছে দেবস্ত্ততি, প্রার্থনা ইত্যাদি। ঋক্ মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞে দেবতাদের আহবান করা হয়, যজুর্মন্ত্রের দ্বারা তাঁদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করা হয় এবং সামমন্ত্রের দ্বারা তাঁদের স্ত্ততি করা হয়। ব্রাহ্মণ মূলত বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা। এটি গদ্যে রচিত এবং প্রধানত কর্মাশ্রয়ী। আরণ্যক কর্ম-জ্ঞান উভয়াশ্রয়ী এবং উপনিষদ্ বা  বেদান্ত সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানাশ্রয়ী।
বেদের বিষয়বস্ত্ত সাধারণভাবে দুই ভাগে বিভক্ত কর্মকান্ড ও জ্ঞানকান্ড। কর্মকান্ডে আছে বিভিন্ন দেবদেবী ও যাগযজ্ঞের বর্ণনা এবং জ্ঞানকান্ডে আছে ব্রহ্মের কথা। কোন দেবতার যজ্ঞ কখন কীভাবে করণীয়, কোন দেবতার কাছে কী কাম্য, কোন যজ্ঞের কী ফল ইত্যাদি কর্মকান্ডের আলোচ্য বিষয়। আর ব্রহ্মের স্বরূপ কী, জগতের সৃষ্টি কীভাবে, ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কী এসব আলোচিত হয়েছে জ্ঞানকান্ডে। জ্ঞানকান্ডই বেদের সারাংশ। এখানে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর এক, তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তাঁরই বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ বিভিন্ন দেবতা। জ্ঞানকান্ডের এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ভারতীয় দর্শনচিন্তার চরম রূপ উপনিষদের বিকাশ ঘটেছে।
এসব ছাড়া বেদে অনেক সামাজিক বিধিবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ইত্যাদির কথাও আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথাও আছে। বেদের এই সামাজিক বিধান অনুযায়ী সনাতন হিন্দু সমাজ ও  হিন্দুধর্ম রূপ লাভ করেছে। হিন্দুদের বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও বৈদিক রীতিনীতি যথাসম্ভব অনুসরণ করা হয়।ঋগ্বেদ থেকে তৎকালীন নারীশিক্ষা তথা সমাজের একটি পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার একটি বিস্তারিত বিবরণ। এসব কারণে বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়

বেদ চার প্রকার যথা - ঝগবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ।
বেদ সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার চৌমুখী শ্রুত বাণী। বেদ সংসারে সর্বপ্রথম গ্রন্থ। বেদ অর্থ জ্ঞান আর পূরাতন জ্ঞান বিজ্ঞানের ভাণ্ডার হল বেদ। বেদে রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সহ দেবদেবী, মানব, অসুর, দৈত্য, দানব, গন্ধর্ব্য, জ্যোতিষ, গণিত, রসায়ন, ঔষাধি, গুগল, কাগল, ধার্মিক রীতিনীতি এবং নিয়ম আদির ইতিহাস।
শতপথ ব্রাহ্মণ শ্লোক অনুসারে অগ্নি, বায়ু ও সূর্য (আদিত্য) তপস্যা করে ঝগবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্বেদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রথম তিন বেদ অর্থাৎ ঝগবেদকে অগ্নি, যজুর্বেদকে বায়ু ও সামবেদকে সূর্য (আদিত্য) প্রকাশ করেন। শেষে ঝষি অঙ্গিরা অথর্ববেদ প্রকাশ করেন।
বেদে ভারতের ভৌগলিক সহ, সুর্য ও চন্দ্র বংশের রাজাদের রাজনৈতিক বিবরণ, পাহাড় পর্বত, নদনদী ও স্থানের নামের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
বেদে 28000 পাণ্ডুলিপি রয়েছে আর এই পাণ্ডুলিপি মহারাষ্ট্রের পোনের অরিয়েন্টে রিচার্চ ইন্সটিটিউটে নিরাপদ কেন্দ্রের ভাণ্ডারে রাখা হয়েছে। ঝগবেদের 30 পাণ্ডুলিপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই ইউনেস্কো 1500 থেকে 1800 খৃষ্ঠাব্দের মধ্যে ঝগবেদের এই 30 পাণ্ডুলিপির তথ্য সংগ্রহ করে সাংস্কৃতিক তথ্য কেন্দ্রে রাখে।
উল্লেখনীয় 158 সুচীতে ভারতের তথ্য 33 রয়েছে।
পরমাত্মা যেমন নিত্য তাঁহার জ্ঞান এই বেদও নিত্য। ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যা জানিবার জন্য একই বেদ চারিভাগে বিভক্ত হইয়াছে-ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ব্ববেদ। চারি বেদে যথাক্রমে চারি বিষয়ের বর্ণনা রহিয়াছে, যথা- বিজ্ঞান, কর্ম, উপাসনা ও জ্ঞান। সৃষ্টির শুরুতে ঈশ্বর অগ্নি ঋষি, বায়ু ঋষি, আদিত্য ঋষি ও অঙ্গিরা ঋষির আত্মায় যথাক্রমে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ প্রকাশ করিয়েছেন।
ঋচ্ ধাতুর অর্থ স্তুতি করা অর্থাৎ গুণ প্রকাশ করা; যে বেদে সর্ব পদার্থের স্তুতি অর্থাৎ গুণ প্রকাশ করা হইয়াছে তাহাই ‘ঋগ্বেদ’। 
যজ্ ধাতুর অর্থ দেব পুজা, সঙ্গতি করণ ও দান। যে বেদে মোক্ষ সাধনা ও ইহলৌকিক ব্যবহার অর্থাৎ কর্মকাণ্ডের বিধান প্রকাশিত হইয়াছে তাহাই ‘যজুর্বেদ’। 

যাহাতে জ্ঞান ও আনন্দের উন্নতি হয় তাহাই ‘সামবেদ’। থর্ব অর্থ সচল এবং অথর্ব অর্থ অচল ব্রহ্ম; যাহাতে অচল ব্রহ্মের জ্ঞান ও সংশয়ের দোদুল্যমান অবস্থার সমাপ্তি হয় তাহাই ‘অথর্ব’ বেদ। ছন্দ, অথর্বাঙ্গিরস ও ব্রহ্মবেদ এগুলি অথর্ব বেদেরই নাম।


বেদের উপবেদ রয়েছে আর তা হল ঋগবেদের উপবেদ আয়ুর্বেদ, যজুর্বেদের উপবেদ ধনুর্বেদ, সামবেদের উপবেদ গন্ধর্ব্যবেদ ও অথর্ববেদের উপবেদ শত্যাপণ বা অস্থাব্দবেদ। বেদের বিভাগ চার। ঝগবেদ - স্থিতি, যজুর্বেদ - রুপান্থর, সামবেদ - গতিশীল ও অথর্ববেদ জড়। আবার ঝগবেদকে - ধর্ম, যজুর্বেদকে - মুক্ত, সামবেদকে - কাম ও অথর্ববেদকে - অর্থ বলা হয়েছে। এই তথ্যানুসারে ঝগবেদকে ধর্মশাস্ত্র, যজুর্বেদকে মুক্তশাস্ত্র, সামবেদকে কামশাস্ত্র ও অথর্ববেদকে অর্থশাস্ত্র রচনা করা হয়েছে।
1 - ঋগবেদ:
ঝগ অর্থাৎ স্থিতি ও জ্ঞান। ঝগবেদ হল সর্বপ্রথম পদাত্মক বেদ। ইহাতে 10 মণ্ডল 1028 শ্রুত 11000 মন্ত্র এবং পাঁচটি শাখা - শাক্কল, বাস্কল, অস্বলায়ন, সংখ্যায়ন, মুণ্ডুলায়ন রয়েছে।
ভৌগলিক স্থিতি, মন্ত্র দ্বারা যজ্ঞের আহুতি, দেবদেবীদের আহ্বান, প্রার্থনা, জল চিকিৎসা, বায়ু চিকিৎসা, মানবের চিকিৎসা, স্বর চিকিৎসার বর্ণনা করা হয়েছে। ঝগবেদের 10 মণ্ডলে ঔষধির সংখ্যা 125 আর তা 107 স্থানে পাওয়া যায় উল্লেখ রয়েছে। ঔষধির মধ্যে সোমের বিশেষ বর্ণনা করা হয়েছে।ঋগ্বেদে মোট মন্ত্র সংখ্যা ১০৫৮৯। সমস্ত ঋগ্বেদ ১০ মণ্ডলে, ৮৫ অনুবাকে ও ১০১৮ সূক্তে বিভক্ত। ঋগ্বেদকে অন্য ভাবেও বিভাগ করা হইয়াছে। যেমন-অষ্টক ৮, অধ্যায় ৬৪ ও বর্গ ১০২৪। 
2 - যজুর্বেদ:
যজুর্বেদ হচ্ছে, যৎ মানে গতিশীল আর জু মানে আকাশ, তারপর কর্ম এবং শেষত্বম কর্মের প্রের্যণা করা, যজ্ঞ করার মন্ত্র তাছাড়া তথ্য ও জ্ঞানের বর্ণনা করা হয়েছে। যজ্ঞের বিধিবিধান ও প্রক্রিয়ার আসল গদ (দীর্ঘ) মন্ত্র আর এই যজুর্বেদে রয়েছে শুক্ল ও কৃষ্ণ দুই শাখা।
কৃষ্ণব্যাসপায়ন ও ঝষির সম্পর্ক কৃষ্ণে রয়েছে এবং কৃষ্ণের চার শাখাও রয়েছে।
শুক্লে যাজ্ঞবল্ক ঝষির সম্পর্ক রয়েছে আর শুক্লের দুই শাখায় 40 অধ্যায় রয়েছে। যজুর্বেদের এক মন্ত্রে চর্বিহি ধনুকের বর্ণনা আছে তাছাড়া দিব্যি বৈদ্য ও কৃষি বিজ্ঞানের বর্ণনা করা হয়েছে।
3 - সামবেদ:
সামবেদের অর্থ রুপান্থরণ। ইহাতে সঙ্গীত, সংযমতা ও উপাসনার বর্ণনা করা হয়েছে। এই বেদে ঝগবেদের রচনানুযায়ী সঙ্গীতের রুপ সম্বন্ধে বিবরণ আছে আর তা হল গীতা পুস্তক অর্থাৎ সঙ্গীতের মুল শাস্ত্র।
সাম বেদের মন্ত্রসংখ্যা ১৮৯৩। সামবেদ ৩ ভাগে বিভক্ত, যথা পূর্বার্চিক, মহানাম্নীআর্চিক ও উত্তরার্চিক। মহানাম্নী আর্চিককে পূর্বার্চিকের মধ্যেই ধরা হয়। পূর্বার্চিক ৪ কাণ্ডে বিভক্ত, ৪ কাণ্ড ৬ প্রপাঠক বা ৫ অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রপাঠক অর্দ্ধ প্রপাঠক ও দশতিতে বিভক্ত। উত্তরার্চিক ২১ অধ্যায় ও ৯ প্রপাঠক। এই প্রপাঠকগুলিতে অর্দ্ধ প্রপাঠক আছে, দশতি নাই কিন্তু সূক্ত আছে। 
4 - অথর্ববেদ:
অথর্ববেদ হচ্ছে, থর্ব অর্থ কম্পণ আর অথর্ব অর্থ অকম্পণ। জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কর্ম করে পরমাত্মার উপাসনাতে নিমগ্ন থেকে মনে অকম্পণ বুদ্ধি আসে আর তাতে মুক্তি লাভ হয়। এই বেদে রহস্যময়ী বিদ্যা আর জড়ি বুটি চমৎকার আয়ুর্বেদ আদি তথ্যের বর্ণনা রয়েছে।
অথর্ববেদের 20 অধ্যায় 5687 মন্ত্র ও 8 খন্ড আছে যাহাতে ভেষজবেদ এবং ধাতুবেদের নাম রয়েছে। ইহাতে ব্যবসা বানিজ্য, আয় উন্নতি করা আর মনকে স্থির অস্থির করার বর্ণনা করা হয়েছে।
 

ব্যাবহারিক বিভাজন

ব্যাবহারিক বিভাজনগুলো যথাক্রমে ঋক , সাম , যজু ও অথর্ব । বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বা শ্রুতি সংহিতা নামে পরিচিত চারটি প্রধান সংকলনকে কেন্দ্র করে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মের যজ্ঞ অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত:
  1. ঋগ্বেদ অংশে হোতার বা প্রধান পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে;
  2. যজুর্বেদ অংশে অধ্বর‍্যু বা অনুষ্ঠাতা পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে।
  3. সামবেদ অংশে উদ্গাতার বা মন্ত্রপাঠক পুরোহিত কর্তৃক গীত স্তোত্রগুলি সংকলিত হয়েছে;
  4. অথর্ববেদ অংশে মারণ, উচাটন, বশীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি সংকলিত হয়েছে।[১২]
 

গাঠণিক বিভাজন

এ বিভাজনগুলো হচ্ছে মন্ত্র বা সংহিতা , ব্রাহ্মণ , আরণ্যকউপনিষদ্‌। মন্ত্রাংশ প্রধানত পদ্যে রচিত, কেবল যজুঃসংহিতার কিছু অংশ গদ্যে রচিত। এটাই বেদের প্রধান অংশ।

সংহিতা:

ব্রাহ্মণ:

বেদের দুটি অংশ-মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ । বেদের যে অংশে মন্ত্রের আলোচনা ও যজ্ঞে তার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে তাকে ব্রাহ্মণ বলে।এটি গদ্যে রচিত।
আরণ্যক বনবাসী তপস্বীদের যোগ্য ভিত্তিক বিভিন্ন ধ্যানের বর্ণনা। এটি কর্ম ও জ্ঞান উভয়ই।

উপনিষদ

এটি বেদের সম্পূর্ণরূপে একটি জ্ঞান। এই অংশটিতে একটি সহমর্মিতা দেওয়া হয়েছে। পরম সত্যের উপলব্ধি করাই উপনিষদে পন্থাই শ্রেষ্ঠ। আমাদের শিক্ষা দেয় উপনিষদ। হর্স নন্দের ভাষায় উপনিষদগুলি হল দার্শনিক নিবন্ধ এদের উপজীব্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্তরালবর্তী সত্যবতী আর মানুষের প্রকৃত স্বরূপ জীবনের উদ্দেশ্য ও সেই উদ্দেশ্য সাধনে উপায়ে প্রভৃতি বিশেষ বিষয়ক ভাবে প্রকাশিত হয়।
 
 বেদ বলতে আমরা বুঝি চার প্রকার শাস্ত্রগ্রন্থকে যথা (১) সংহিতা (২) ব্রাহ্মণ (৩) আরণ্যক ও (৪) উপনিষদ। এদের মধ্যে সংহিতা এবং ব্রাহ্মণকে বলা হয় ক্রিয়া বা কর্মকাণ্ড। যেখানে যাগযজ্ঞ বিভিন্ন প্রকার বিধি ব্যবস্থার কথাই প্রধানত আছে। অবশিষ্ট আরণ্যক এবং উপনিষদকে বলা হয় জ্ঞানকাণ্ড; যেখানে বিভিন্ন প্রকার উপাসনা বিধি এবং অধ্যাত্মবিদ্যাই মূখ্য আলোচনার বস্তু। যার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে বেদান্তদর্শন। শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস সম্পাদিত বেদবিদ্যা
ঋগ্বেদ
ঋষি পৈল
সংহিতা: ১০২৮টি সূক্ত এবং ১০,৬০০ মন্ত্র বা ঋক্
ব্রাহ্মণ: ১) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ
২) কৌষীতকি বা শাঙ্খায়ণ ব্রাহ্মণ
আরণ্যক: ১) ঐতরেয় আরণ্যক
২) কৌষীতকি আরণ্যক
উপনিষদ: ১) ঐতরেয় উপনিষদ
২) কৌষীতকি উপনিষদ
সামবেদ
ঋষি জৈমিনি
সংহিতা: ১৮১০ টি মন্ত্র বা সাম।এর মধ্যে ৭৫টি ছাড়াসবই ঋগ্বেদের মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি।
ব্রাহ্মণ: ১) পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ
২) ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ
৩) ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ
৪) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ
৫) সামবিধান ব্রাহ্মণ
৬) দেবতাধ্যায় ব্রাহ্মণ
৭) আর্ষের ব্রাহ্মণ
৮) বংশ ব্রাহ্মণ
আরণ্যক: ১) ছান্দোগ্য আরণ্যক
উপনিষদ: ১) ছান্দোগ্য উপনিষদ
২) কেন উপনিষদ
যজুর্বেদ
ঋষি বৈশম্পায়ন
কৃষ্ণযজুর্বেদ বা তৈত্তিরীয় সংহিতা
সংহিতা: ২১৮৪ টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র।
ব্রাহ্মণ: ১) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ
আরণ্যক: ১) তৈত্তিরীয় আরণ্যক
উপনিষদ: ১) কঠ উপনিষদ
২) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ
৩) মহানারায়ণ উপনিষদ
৪) মৈত্রায়ণ উপনিষদ
৫) তৈত্তিরীয় উপনিষদ
শুক্লযজুর্বেদ বা বাজসনেয় সংহিতা
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য
সংহিতা : ১৯১৫টি কণ্ডিকা বা মন্ত্র
ব্রাহ্মণ: শতপথ বাহ্মণ
আরণ্যক: বৃহদারণ্যক
উপনিষদ: ১) বৃহদারণ্যক উপনিষদ
২) ঈশ উপনিষদ
অথর্ববেদ
ঋষি সুমন্ত
সংহিতা: ৫৯৭৭টি মন্ত্র।
ব্রাহ্মণ: গোপথ ব্রাহ্মণ
আরণ্যক: নেই
উপনিষদ: ১) প্রশ্ন উপনিষদ
২) মুণ্ডক উপনিষদ
৩) মাণ্ডুক্য উপনিষদ
বেদাঙ্গ
সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ ছাড়াও প্রত্যেক বেদের সাথে যুক্ত আরও চার প্রকারের সূত্র আছে তাদের বলা হয় কল্পসূত্র। সায়নাচার্য তাঁর ঋগ্বেদ – ভাষ্যোপক্রমণিকায় বলেছেন- ‘কল্প্যতে সমর্থ্যতে যাগ প্রয়োগোহত্রইতি’। অর্থাৎ যার দ্বারা যাগযজ্ঞাদি কল্পিত বা সমর্থিত হয় তাকে কল্প বলে। বৃত্তিকার বিষ্ণুমিত্রের মতে ‘কল্পো বেদ বিহিতানাং কর্মনামানুপূর্ব্যণে কল্পনা শাস্ত্রম্।’ অর্থাৎ কল্প হলো বেদবিহিত কর্মের নিয়মানুসারী ব্যবস্থা বিধায়ক শাস্ত্র। এ কল্পসূত্র প্রধানত দুই প্রকার- শ্রৌতসূত্র এবং গৃহ্যসূত্র। এ দুটি ভাগের মধ্যে আবার দুটি করে ভাগ নিহিত আছে। শ্রৌতসূত্রের সাথে আছে যজ্ঞের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শুল্বসূত্র এবং গৃহ্যসূত্রের সাথে যুক্ত আছে ধর্মসূত্র। এভাবে আমরা চার প্রকার কল্পসূত্র পাই- (১) গৃহ্যসূত্র, (২) ধর্মসূত্র, (৩) শ্রৌতসূত্র এবং (৪) শুল্বসূত্র।
প্রত্যেক বেদেরও পৃথক পৃথক কল্পসূত্র আছে। প্রাচীনকালে বেদের যতগুলো শাখা ছিল, ঠিক ততগুলিই কল্পসূত্র ছিল বলে বিশ্বাস। প্রাচীন উৎস থেকে জানা যায়, পূর্বে কল্পসূত্র ছিল ১১৩০টি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে এতগুলো কল্পসূত্র পাওয়া যায় না। বর্তমানে পাওয়া যায় প্রায় ৫০টি কল্পসূত্র। নিচে এর তালিকা দেয়া হলো।
ঋগ্বেদ
শ্রৌতসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন (৩) পরশুরাম।
গৃহ্যসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন।
ধর্মসূত্র : (১) বশিষ্ঠ
সামবেদ
শ্রৌতসূত্র : (১) লাট্যায়ন বা আর্ষেয়কল্প (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয়।
গৃহ্যসূত্র : (১) গোভিল (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয় (৪) খাদির।
ধর্মসূত্র : (১) গৌতম।
কৃষ্ণযজুর্বেদ
শ্রৌতসূত্র : (১) বৌধায়ন (২) আপস্তম্ব (৩) মানব (৪) সত্যাষাঢ় বা হিরণ্যকেশী (৫) বৈখানস।
গৃহ্যসূত্র : (১) বৌধায়ন (২) আপস্তম্ব (৩) মানব (৪) হিরণ্যকেশী (৫) ভারদ্বাজ (৬) বারাহ (৭) কাঠক (৮) লৌগাক্ষি (৯) বৈখানস (১০) বাধুল।
ধর্মসূত্র : (১) মানব (২) বৌধায়ন (৩) আপস্তম্ব (৪) হিরণ্যকেশী (৫) বৈখানস।
শুল্বসূত্র : (১) বৌধায়ন (২) আপস্তম্ব (৩) হিরণ্যকেশী (৪) কাঠক (৫) মানব (৬) বারাহ।
শুক্লযজুর্বেদ
শ্রৌতসূত্র : (১) কাত্যায়ন।
গৃহ্যসূত্র : (১) পারস্কর বা বাজসনেয়।
ধর্মসূত্র : (১) শঙ্খ (২) লিখিত।
শুল্বসূত্র : (১) কাত্যায়ন।
অথর্ববেদ
শ্রৌতসূত্র : (১) বৈতান।
গৃহ্যসূত্র : (১) কৌশিক।
ধর্মসূত্র : (১) পঠিনসী।
ঋগ্বেদ, সামবেদ, শুক্লযজুর্বেদ, কৃষ্ণযজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ এ পাঁচপ্রকারের প্রত্যেকের অন্তর্ভুক্ত সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ নিয়ে সমগ্র বেদবিদ্যা। এর মধ্যে শুধু অথর্ববেদের কোন আরণ্যক নেই। সমগ্র বেদবিদ্যাকে যদি জ্ঞানরাজ্যের একটি তালা রূপে কল্পনা করা হয় তবে সেই তালা খুলতে ছয়টি চাবির প্রয়োজন। অন্য সাধারণ তালা থেকে এর পার্থক্য, এ তালা খুলতে একই সাথে ছয়টি চাবির প্রয়োজন। কোন একটি চাবি বাদ পড়লে তালাকে খোলা যাবে না। এ ছয়টি চাবিই হল বেদের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ষড়বেদাঙ্গ। শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ছন্দ, জ্যোতিষ। অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষদে আমরা বেদাঙ্গ সহ বেদবিদ্যার তালিকা পাই- “তত্রাপরা ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদঃ অথর্ববেদঃ শিক্ষা কল্পো ব্যাকরণং নিরুক্তং ছন্দো জ্যোতিষমিতি।” (মুণ্ডক উপনিষদ: প্রথম মুণ্ডক, প্রথম অধ্যায়, মন্ত্র-৫)
–অপরা বিদ্যা ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, শিক্ষা, কল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ এ দশটি।
1Vedaবেদে ধ্বনিতত্ত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেবার কারণে ধ্বনিতত্ত্বকে আলোচনার মাধ্যমেই প্রথম বেদাঙ্গ শিক্ষা শুরু হয়। যে শাস্ত্রে বর্ণ, স্বর, মাত্রা ইত্যাদির যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োজনবিধি লিপিবদ্ধ আছে তাকে শিক্ষা বলে। প্রত্যেক বেদের সাথে শিক্ষা যুক্ত আছে। যথা- ঋগ্বেদ : পাণিনীয় শিক্ষা সামবেদ : নারদীয় শিক্ষা যজুর্বেদ : যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা অথর্ববেদ : মাণ্ডূকী শিক্ষা ।
২. কল্প : বেদাঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হলেও কল্পসূত্র গুলি মূল বেদের সাথে এমনভাবে যুক্ত যে চার প্রকার (ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ) বেদের সাথে সে অচ্ছেদ্য হয়ে গেছে। তাই পূর্বে চার প্রকার বেদের সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদের তালিকার সাথে সাথে চার প্রকার কল্পসূত্রেরও তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং কল্প সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা সেখানেই করা হয়েছে। তবুও আমরা চার প্রকার সূত্রের নাম দিয়ে দিচ্ছি।
শ্রৌতসূত্র : যাগযজ্ঞ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি ব্যবস্থা সংক্রান্ত সূত্র।
গূহ্যসূত্র : এ সূত্রগুলোকে আমরা এক কথায় বলতে পারি পারিবারিক আইন। অর্থাৎ একজন মানুষের পরিবারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত করণীয় কর্তব্য।
ধর্মসূত্র : ধর্ম, রাষ্ট্র, সমাজনিষ্ঠ নাগরিক জীবনের কর্তব্য। এতে ধর্ম সম্বন্ধীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয় প্রকার বিধিনিষেধাদি লিপিবদ্ধ আছে।
শুল্বসূত্র : শুধুমাত্র যজুর্বেদেরই শুল্বসূত্র পাওয়া যায়। যজুর্বেদ যেহেতু যজ্ঞসম্বন্ধীয়, তাই যজ্ঞবেদির নির্মাণে শূল্বসূত্রের একান্ত প্রয়োজন। শুল্ব অর্থ পরিমাপ। বিধি প্রকার যজ্ঞবেদি নির্মাণে এ পরিমাপ একান্ত প্রয়োজনীয়। শুল্বসূত্রকে পৃথিবীর প্রাচীনতম জ্যামিতির নিদর্শন বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাবতে অবাক লাগে ইউক্লিড, থ্যালিস, পিথাগোরাসের বহু পূর্বে আমাদের দেশের ঋষিরা কত অসাধারণভাবে জ্যামিতি বিজ্ঞানের চর্চা করেছেন।
৩. নিরুক্ত: ‘নির্ঘণ্টু’ নামক পঞ্চ অধ্যায়ে বিভক্ত কোষ গ্রন্থই নিরুক্তের প্রাচীনতম উৎস। এ কোষ গ্রন্থটি অজানা কোন এক ঋষি প্রণীত। এ নির্ঘণ্টু নামক ১৭৭১টি শব্দতালিকার উপরই যাস্ক মুনি ব্যাখ্যামূলক একটি কোষগ্রন্থ রচনা করেন; তাই নিরুক্ত। নিঃশেষরূপে পদসমূহ এতে উক্ত হয়েছে বলে একে নিরুক্ত বলে। ‘নির্ঘণ্টু’ এবং যাস্কমুনি রচিত এর ব্যাখ্যা নিরুক্তই পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন অভিধান কোষ। নিরুক্ত তিনটি ভাগে বিভক্ত- (১) নৈর্ঘণ্টুকাণ্ড (২) নৈগম কাণ্ড ও (৩) দৈবত কাণ্ড।
৪. ব্যাকরণ: কোন একটি ভাষার ভিত্তিসৌধ রচিত হয় সেইভাষার ব্যাকরণের উপর। বেদের ন্যায় প্রাচীনতম ভাষার ক্ষেত্রে এ কথাটি সর্বাংশে সত্য। একারণে পাণিনীয় শিক্ষায় ব্যাকরণকে বেদের মুখ বলা হয়েছে। বি-আ-কৃ+অনট্= ব্যাকরণ। তাই ব্যাকরণ শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ- ব্যাকৃত করা, প্রকাশিত করা, ছড়িয়ে দেয়া। বেদবিদ্যাকে প্রকাশিত করার জন্য ব্যাকরণবিহীন অসম্ভব। এ কারণে পতঞ্জলির মহাভাষ্যে ব্যাকরণের প্রয়োজন বোঝানোর জন্য কাত্যায়ণ বররুচির একটি বার্ত্তিক উল্লেখ করা হয়েছে-‘রক্ষোহাগমলঘ¡সন্দেহাঃ প্রয়োজনম্।’ অর্থাৎ রক্ষা, ঊহ, আগম, লঘু এবং অসন্দেহ- এ পাঁচটি বিষয়ের জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন।
রক্ষা : বেদের রক্ষার জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন। প্রকৃতি, প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, বর্ণের লোপ, বর্ণের আগম, বর্ণবিকার সম্বন্ধে যিনি সঠিকভাবে জানেন তিনিই বিশুদ্ধভাবে বেদের জ্ঞান লাভ করতে পারবেন এবং বিশুদ্ধ বেদবিদ্যার ধারাকে রক্ষা করতে পারবেন।
ঊহ: সঠিক বিচার করে পরিবর্তন। কারণ বেদে সমস্ত লিঙ্গ এবং সমস্ত বিভক্তিতে মন্ত্রগুলি পঠিত হয়নি। যিনি যজ্ঞ করবেন তাঁর প্রধান কর্তব্য সঠিক ব্যাকরণ জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি যজ্ঞের প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রগুলির যথাযথ পরিবর্তন সাধন করে যজ্ঞকর্ম সমাধা করবেন।
আগম : কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত না হয়ে ষড়বেদাঙ্গসহ বেদ অধ্যয়ন করা এবং অবগত হওয়া জ্ঞানী ব্যক্তির কর্তব্য। অর্থাৎ নিষ্কামভাবে বেদবিদ্যাকে ভালবেসে সঠিক বেদবিদ্যার চর্চার জন্যও ব্যাকরণের প্রয়োজন।
লঘু: লঘু অর্থ সংক্ষেপ। অর্থাৎ ভাষাকে সহজ এবং সংক্ষিপ করার জন্যও ব্যাকরণ অধ্যয়ন করা উচিত। বেদজ্ঞকে সঠিক বেদজ্ঞানের জন্য অসংখ্য শব্দ জানতে হবে। কারণ শব্দজ্ঞানবিহীন ব্যক্তি বেদরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই ব্যাকরণই একমাত্র সহজতর এবং সংক্ষেপতম উপায় যথার্থ শব্দ জ্ঞান লাভের।
অসন্দেহ: বেদমন্ত্রের সন্দেহ নিবারণের জন্যও ব্যাকরণ অধ্যয়ন করা উচিত।
এ পাঁচটি প্রধান প্রয়োজনের অতিরিক্ত মহর্ষি পতঞ্জলি (খ্রি. পূ. দ্বিতীয় শতক) শব্দানুশাসনের অর্থাৎ ব্যাকরণের আরও ১৩টি প্রয়োজনের কথা বলেছেন-
(১) তেহসুরাঃ (২) দুষ্টঃ শব্দঃ (৩) যদধীতম্ (৪) যন্তু প্রযুঙ্ক্তে (৫) অবিদ্বাংসঃ (৬) বিভক্তিং কুর্বন্তি, (৭) যো বা ইমাম্ (৮) চত্বারি (৯) উত ত্বঃ (১০) সক্তুমিব (১১) সারস্বতীম্ (১২) দশম্যাং পুত্রস্য (১৩) সুদেবো অসি বরুণ
৫. ছন্দ: বেদ মন্ত্রের জন্য ছন্দের জ্ঞান অপরিহার্য। কারণ চারবেদের অধিকাংশ মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ। বৈদিক ছন্দ সাতটি। গায়ত্রী, উষ্ণিক্, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙ্ক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী। বৈদিক ছন্দকে অক্ষরছন্দ বলা হয়। কারণ মন্ত্রের অক্ষরের সংখ্যা গুণে গুণে নির্ণয় করতে হয়। অক্ষর বলতে কোনবর্ণ নয়, শব্দ উচ্চারণের স্বল্পতম প্রয়াসকে বোঝায়। যাকে আমরা ইংরেজিতে Syllable বলি। গায়ত্রী ছন্দে অক্ষরের সংখ্যা ২৪টি, উষ্ণিক ছন্দে ২৮টি, অনুষ্টুপ ছন্দে ৩২টি, বৃহতী ছন্দে ৩৬টি, পঙ্ক্তি ছন্দে ৪০টি, ত্রিষ্টুপ ছন্দে ৪৪টি এবং সর্বশেষে জগতী ছন্দে অক্ষরের সংখ্যা ৪৮টি। লক্ষ্য করলে দেখা যায় অসাধারণ গাণিতিক বিন্যাসে বৈদিক ছন্দের উদ্ভব। অর্থাৎ গায়ত্রী থেকে জগতী পর্যন্ত প্রত্যেকটি ছন্দে পর্যায়ক্রমে চারটি করে অক্ষরের বৃদ্ধি ঘটেছে। এ কারণেই ঋষি কাত্যায়ন বলেছেন (কাত্যায়ন ১/১), “যিনি ঋষি ছন্দ দেবতা ও মন্ত্রের বিনিয়োগ না জেনে মন্ত্রের দ্বারা যাগ করেন বা অধ্যয়ন-অধ্যাপন করেন, তিনি কাঠের গুঁড়ির মত কেবল ভারবাহী হন অথবা গর্তে পতিত হয়ে পাপে আচ্ছন্ন হন।” একারণেই ছন্দ জানার জন্য ছন্দগ্রন্থের প্রয়োজন। ছন্দ সম্পর্কে যাস্কের নিরুক্তে বলা হয়েছে, ‘ছন্দাংসি ছাদনাৎ’ (৭/১২) অর্থাৎ আচ্ছাদন করে বলে তাকে ছন্দ বলে। কি থেকে আচ্ছাদন? পাপ থেকে আচ্ছাদন। অর্থাৎ যা মৃত্যু থেকে রক্ষা করে অমৃতে নিয়ে যায় তাই ছন্দ। পূর্বে হয়ত একাধিক ছন্দোগ্রন্থ ছিল কিন্তু বর্তমানে একমাত্র ঋষি পিঙ্গল রচিত ‘পিঙ্গলছন্দসূত্র’ই একমাত্র বিদ্যমান। পিঙ্গলছন্দসূত্রের উপর হলায়ুধ ভট্টের বৃত্তি অনন্য।
৬. জ্যোতিষ: ষড়বেদাঙ্গের সর্বশেষ জ্যোতিষ। এ জ্যোতিষ বর্তমানে প্রচলিত হস্তরেখা বিদ্যা নয়। এ হলো নক্ষত্রবিদ্যা। যাকে আমরা ইংরেজিতে বলতে পারি ‘ঠবফরপ অংঃৎড়হড়সু’। সে যুগে বর্তমান কালের মত ঘরে ঘরে ক্যালেন্ডার ছিল না, কিন্তু সে সময়েও তিথি-নক্ষত্রের হিসাব রাখতে হতো। শ্রৌতশাস্ত্রগুলোর মধ্যে দেখা যায় অধিকাংশ যজ্ঞেরই তিথি নক্ষত্র এবং ঋতু উল্লেখ করে দেয়া আছে। অর্থাৎ কখন এ যজ্ঞকর্মটি করতে হবে। যেমন শতপথ ব্রাহ্মণে যে ‘দশপূর্ণমাস’ নামক যজ্ঞের কথা বলা আছে তা অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত করতে হয়। অর্থাৎ কেউ যদি কখন অমাবস্যা এবং কখন পূর্ণিমা তা না জানেন তাহলে সে যজ্ঞ কর্ম সমাধা করতে পারবেন না। এ কারণেই তৈত্তিরীয় আরণ্যকে বলা হয়েছে, ‘যজ্ঞকাল সিদ্ধির জন্য জ্যোতিষের প্রয়োজন’। বৈদিক জ্যোতিষের বিভিন্ন তত্ত্বের উল্লেখ পাই আমরা ঋগ্বেদের কিছু মন্ত্রে এবং শতপথব্রাহ্মণে। বৈদিক জ্যোতিষের দুটি গ্রন্থ পাওয়া যায়-একটি ঋগে¦দীয়, এতে আছে ৩৬টি শ্লোক এবং অন্যটি যজুর্বেদীয়, এতে আছে ৪৩টি শ্লোক। এ গ্রন্থ দুটিতে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নে চন্দ্রসূর্যের অবস্থান অমাবস্যা, পূর্ণিমা তিথি এবং নক্ষত্রম-ল ইত্যাদি বিবিধ বৈজ্ঞানিক বিষয়ের আলোচনা আছে।
বেদান্ত
ভারতীয় পরম্পরার বৈশিষ্ট্যই হলো কোন বিষয় যেমন খুব বড় কাঠামোতে থাকে ঠিক তেমনিভাবে অতি ক্ষুদ্র কাঠামোতে সূত্রাকারেও থাকে। যজ্ঞ কর্মের বিধানগুলো শতপথ ব্রাহ্মণ, ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের মতো বৃহৎ বৃহৎ ব্রাহ্মণগুলোতে যেমন বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে। ঠিক তেমনি এ বিধানগুলোই আছে বিভিন্ন শ্রৌতসূত্রগুলোতে সূত্রাকারে সংক্ষিপ্তভাবে। বেদান্তে যে জ্ঞানের কথা আছে তাই আছে বেদান্তসূত্রে। যা আমাদের কাছে ব্রহ্মসূত্র নামে প্রচলিত। এর অন্য নাম ব্যাসসূত্র, ভিক্ষুসূত্র, শারীরিকসূত্র, বাদরায়ণসূত্র ইত্যাদি। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে বেদ দুটি কাণ্ডে বিভক্ত- কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। সংহিতা এবং ব্রাহ্মণকে বলা হয় কর্মকাণ্ড এবং আরণ্যক এবং উপনিষদকে বলা জ্ঞানকাণ্ড। কিন্তু প্রচলিত এ কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ বেদ অর্থই জ্ঞান। সর্বপ্রকার জ্ঞান যা জীবকে নিঃশ্রেয়স এবং অভ্যুদয় দুই দান করে। অভ্যুদয়ের মাধ্যমে আমরা জাগতিক সমৃদ্ধি লাভ করি এবং নিশ্রেয়সের মাধ্যমে আমরা মোক্ষ, মুক্তি, নির্বাণ ও কৈবল্য লাভ করি। যদিও বেদ মানে জ্ঞান এবং বেদবিদ্যার সর্বস্থানেই জ্ঞানতত্ত্ব আছে। এরপরও আমরা বেদের জ্ঞানকাণ্ডের শেষ অংশকে অর্থাৎ উপনিষদকে সাধারণত বেদান্ত বলে থাকি। উপনিষদগুলো বেদের কোন না কোন অংশের সাথে যুক্ত। কোনটি সংহিতার সাথে, কোনটি ব্রাহ্মণের সাথে, কোনটি আরণ্যকের অথবা কোনটি পরম্পরাগতভাবে যুক্ত।
আরণ্যকে যে অধ্যাত্মবিদ্যার সূচনা উপনিষদে তা চরম শিখরে পৌঁছে জ্ঞানরাজ্যের মুকুটমণিতে পরিণত হয়েছে। উপনিষদ শব্দের ব্যুৎপত্তি হলো উপ-নি+সদ্+ক্বিপ্=উপনিষধদ। ‘উপ’ অর্থ নিকটে। ‘নি’ অর্থ নিশ্চিতভাবে। ‘সদ্’ অর্থ বিনাশ করা। অর্থাৎ ব্যুৎপত্তিগতভাবে উপনিষদ শব্দের অর্থ হল আচার্যের নিকট উপস্থিত হয়ে নিশ্চয়ের সাথে বেদবিদ্যা অনুশীলনের মাধ্যমে অজ্ঞান-অবিদ্যার যা বিনাশ করে তাই উপনিষদ। উপনিষদ ১৪টি।
ঋগ্বেদের ঐতরেয় উপনিষদ এবং কৌষীতকি বা শাংখ্যায়ন উপনিষদ।
সামবেদের ছান্দোগ্য উপনিষদ এবং কেন ‘উপনিষদ।
কৃষ্ণযজুর্বেদের-কঠ উপনিষদ, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, মৈত্রায়নী উপনিষদ, তৈত্তিরীয় উপনিষদ এবং মহানারায়ণ উপনিষদ।
শুক্লযজুর্বেদের- ঈশ উপনিষদ এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদ।
পরিশেষে অথর্ববেদের প্রশ্ন উপনিষদ, মণ্ডুক উপনিষদ এবং মাণ্ডুক্য উপনিষদ।
এ উপনিষদগুলো ব্যতীত অন্য যেসব উপনিষদ আছে তা শুধু নামেই উপনিষদ। এর সাথে বেদের কোন রূপ সম্পর্ক নেই।
‘বেদান্ত’ বললে যেমন শুধু উপনিষদকে বোঝায়, তেমনিভাবে ‘বেদান্তদর্শন’ বললে বোঝায় প্রস্থানত্রয়ীকে। ‘প্রস্থান’ বলতে চলে যাওয়া বোঝায়। কোথায় চলে যাওয়া? তত্ত্বেও চলে যাওয়া, ব্রহ্মের কাছে চলে যাওয়া। এ প্রস্থান অর্থাৎ ব্রহ্মের কাছে চলে যাবার পথ তিন প্রকার।
এ কারণে তাকে প্রস্থানত্রয়ী বলা হয়। এ প্রস্থানত্রয়ী হলো-
(১) শ্রুতি প্রস্থান : বেদ শ্রুতি পরম্পরায় রক্ষিত ছিল বহুদিন। তাই তাঁর এক নাম শ্রুতি। শ্রুতি প্রস্থান বলতে উপনিষদকে বোঝায় অর্থাৎ উপনিষদের অধ্যাত্মতত্ত্বের মাধ্যমে অমৃতময় ব্রহ্মতত্ত্বে প্রস্থান করা।
(২) স্মৃতি প্রস্থান : বেদের জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদের সারাংশ। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে বলা হয় স্মৃতিপ্রস্থান।
(৩) ন্যায় প্রস্থান : ঋষি বাদরায়ণ রচিত ব্রহ্মসূত্র। যা চারটি অধ্যায়ে এবং ৫৫৫টি সূত্রে অখিল বেদবিদ্যাকে প্রকাশ করেছে। প্রথম অধ্যায়ে বেদবাক্যসমূহের সমন্বয়, দ্বিতীয় অধ্যায়ে অবিরোধ, তৃতীয় অধ্যায়ে সাধন এবং চতুর্থ অধ্যায়ে সিদ্ধি বা ফল বর্ণনা করে অনন্ত অধ্যাত্ম শাস্ত্রকে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ সংক্ষিপ্ত সূত্রশাস্ত্রের মাধ্যমে ব্রহ্মতত্ত্বে প্রস্থিত হবার অনন্য পথের সন্ধান দেয়া হয়েছে। বেদান্তদর্শন বা প্রস্থানত্রয়ীর দিকে তাকালে আমরা দেখি বেদের লক্ষ লক্ষ মন্ত্রকে সারাংশ করে নিয়ে আসা হয়েছে বেদের জ্ঞানকা- উপনিষদে। লক্ষ লক্ষ মন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে প্রায় দু’সহস্র মন্ত্রে; অর্থাৎ চতুর্দশ উপনিষদে। উপনিষদের প্রায় দু’সহস্র মন্ত্রকে নিয়ে আসা হয়েছে সহজ, সরল, সর্বজনগ্রাহ্য করে মাত্র ৭০০ শ্লোকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়। এ কারণে গীতাকে সর্ব উপনিষদের সার বলা হয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এ ৭০০ শ্লোককে পরবর্তী কালে আরও সংক্ষেপ করে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রহ্মসূত্রে। মাত্র ৫৫৫টা সূত্রে। দু-তিনটি শব্দের এক একটি সূত্রে। এ ৫৫৫টা সূত্রে বলা বেদান্তদর্শনের তত্ত্বকে আবার বলে দেয়া হয়েছে প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পাদের চারটি সূত্রে। এ সূত্রগুলোকে একসাথে বলা হয় ‘চতুঃসূত্রী’।

বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃতিতে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে
৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি।
১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত)
১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র

১২ টি আদিত্য(বছরের মাস সমুহ)
১ তড়িৎ চুম্বকয়ি শক্তি (Electromagnetic force )
১ যজনা (মানুষ কর্তক স্বার্থহীন পূন্যকর্ম)
এই সকল ৩৩ দেবতার প্রভু হচ্ছে মহাদেবতা অথবা ঈশ্বর যাকে শতপথ ব্রাক্ষনের ১৪ কান্ড অনুযায়ী শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে অন্য কাউকে নয়। এই ৩৩ দেবতার ধারণাটি হচ্ছে বিশাল গবেষণার বিষয় এবং বিষয়টিকে যথাযত ভাবে বোঝার জন্য গভীর অধ্যায়ন প্রয়োজন। তা যাই হোক, বিভিন্ন বৈদ্যিক গ্রন্থে আলোকে এই কথাটি সুস্পষ্ট হয়েছে যে এই সকল সত্ত্বগুলো যাদের আমরা দেবতা বলি তারা কেহই ঈশ্বর নয় এবং উপাসনার যোগ্যও নয়।


যর্যুরবেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।কখনই অন্যায় করো না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা করো না।
ঋগবেদ ১০.৪৮.১: ঈশ্বর সর্বত্রই বিদ্যমান এবং বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে পরিচালিত করেন। পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই জয় ও শ্বাশত কারন প্রদান কারী। প্রতিটি আত্মা অবশ্যই তাঁকেই সন্ধান করবে যেমন করে একটি শিশু তারা বাবাকে খোঁজে। শুধুমাত্র তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও স্বর্গীয় সুখ প্রদান করেন।
ঋগবেদ ১০.৪৮.৫: ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও। তিনি এই জগত সৃষ্টিকারী। সকল আত্মার উচিত পরম সুখ সন্ধান করা জ্ঞান অন্বেষণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে। তারা কখনই ঈশ্বরের বন্ধুত্ব থেকে নিজেকে পরিহার করবে না।
ঋগবেদ ১০.৪৯.১: ঈশ্বরই সত্যের সন্ধানীদের সত্যজ্ঞান দিয়ে থাকেন। তিনিই শুধু জ্ঞানের প্রর্বতক এবং ধার্মিক ব্যাক্তিদের পরম সুখ লাভের জন্য পবিত্র কর্ম করতে উৎসাহী করেন। তিনিই একমাত্র জগতের সৃষ্টিকারী এবং এর পরিচালক। ঙটাই ঈশ্বর ব্যাতীত অন্য কারো উপাসনা করো না।
 


ডিভোর্স বিষয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মত ও আদর্শ

ডিভোর্স বিষয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মত ও আদর্শ
ঠাকুর বরাবরই ডিভোর্সের বিরোধী ছিলেন। ডিভোর্সকে একটি চরম পাপ হিসেবে দেখেছেন তিনি। এতে যে সমাজের অমঙ্গল নিহিত রয়েছে সেটাই তিনি বলেছেন বারবার। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন এক ফুল দিয়ে দুই দেবতার পূজা হয় না।

বর্তমানে হরহামেশাই ডিভোর্স হচ্ছে। এটা যেন জলভাত হয়ে গেছে। ডিভোর্স হযেছে যেন কিছুই হয় নি। ভালো লাগলো বিয়ে করলাম, ভালো লাগলো না ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। কত সহজ হিসাব।  সামান্য বিষয়ে একটু মনোমালিন্য হলেই আজকাল কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে। মেয়ে মনে করে আমি কি তোমার চেয়ে কম আবার স্বামী মনে করে আমি কি তোমার চেয়ে কম। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। কেউ কারো ভালোবাসা চায় না শরীরের চাহিদাটাই যেন সব। সবকিছু বাদ দিয়ে টাকা আর শরীরের পিছনে পড়ে থাকে। জীবনটা যেন এক হতাশার বাক্স। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে পরকীয়া বড় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, অত্যাচার, ঝগড়া, উদাসীনতা, পেশাদারিত্ব,অভদ্রতা, অশ্লীলতা, বিকৃত মানসিকতা দায়ী। সিনেমার জগতে দেখতে দেখতে জীবনটাকে সিনেমার মত ভাবতে শুরু করেছি। আসলে বাস্তবতা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বিয়ে দেওয়ার সময় তাই বংশ ,বর্ণ,গোত্র, সম মনমানসিকতা ,শিক্ষা,পেশা,চরিত্র,ব্যবহার এসব দেখা জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে  কোন ধরনের সমস্যা না হয়।
বিয়েটা ছেলে খেলা নয়। সবকিছু দেখেশুনে  বিয়ে করতে হয়। একজনকে দেখে ভালো লাগলো বিয়ে করে ফেললাম তা কিন্তু নয়। বিয়ে করার সময় কি কি বিষয় দেখতে হবে তা সবার জানা উচিত। কয়েকদিন কারো সাথে ডেটিং করে তারপর দ্রুত বিয়ে করে ফেলা ভালো নয়। পরিবারের মত নেয়াটাও জরুরি। বিয়ে করার আগে দেখতে হবে ঐ মেয়ে বা ছেলে বিয়ের আগে কেমন ছিল। কোন বদঅভ্যাস ছিল কিনা। কোন কুসংগে যেত কিনা। বদরাগী ও নেশাগ্রস্থ কিনা। লোভ আর অহংকারের মাত্রা কেমন। সব দেখেশুনে বিয়ে দেয়া অত্যন্ত জরুরি। কারো সাথে একটু কথা বলে ভালো লাগলো তারপর বিয়ে করে ফেললাম আবার ভালো লাগলো না ছেড়ে দিলাম, আলাদা থাকলাম ,এটা মোটেও উচিত নয়। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কটা খুবই খারাপ।

ডিভোর্সের ফল যে কত খারাপ তা বলার মত নয়। তাতে একটা পরিবার,সমাজ ও দেশের ক্ষতি হয়। এটা কখনো সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। ডিভোর্স তাই বড় ধরণের পাপ ছাড়া কিছু নয়। সন্তান-সন্ততিদের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় পরিবারের সুখ,শান্তি।

ডিভোর্সের কোন প্রতিকার নেই। অন্য কোন উপায়ে এর ক্ষতিকে পুষিয়ে নেওয়া যায় না।তাই সামান্য কারনে ডিভোর্স না দিয়ে পারিবারিক জীবন পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। দরকার হলে দুজনে আলোচনা করতে হবে। মতানৈক্যের বিষয়গুলো আলোচনা করা যেতে পারে। দুজনের মধ্যে বিশ্বাস আর ভালোবাসা বাড়াতে হবে।

স্বামী-স্ত্রী যদি ঠাকুরমুখী হন তবে কখনো সংসারে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ঠাকুরের নির্দেশ মেনে জীবন পরিচালনা করা উচিত। তাতে দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরী হবে।

বিয়ের আগে দুজনে দুজনের পছন্দ অপছন্দ আলোচনা করে নিলে দুজনের মধ্যে সমস্যা হওয়ার কথা না।
দুজনে ঝগড়া না করে ঠান্ডা মাথায় সমস্যাগুলো আলোচনা করলে দেখবেন সুন্দর সমাধান বের হবে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দুজনকে সম্মান করতে হবে এবং শ্রদ্ধা করতে হবে। কেউ কাউকে ছোট করা চলবে না। পুরুষ তার পুরুষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলবে নারী তার নারীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলবে। ফোঁড়া উঠেছে বলে মাথা কেটে ফেলে দিব এমন হতে পারে না।
আসুন ডিভোর্সকে প্রতিরোধ করি। সুস্থ-সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।